জুলাই ১৩, ২০২০
সড়কে বাঁশের সাঁকো, ৫৫ দিনেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি সওজ
সমীর রায়, আশাশুনি : সুপার সাইক্লোন আম্পানে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের আশাশুনির মাড়িয়ালা থেকে ঘোলা ত্রিমোহনী পর্যন্ত প্রায় ৩ কি.মি. সড়কের ৭টি স্থানে ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকায় আজও জোয়ার-ভাটা হয়ে চলেছে। এর মধ্যে ৩টি স্থানে একেবারে গভীর হয়ে যাওয়ায় সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে বানভাসি মানুষ যাতায়াত করছে। আম্পানের পর আজ ৫৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সড়ক ও জনপদ বিভাগ নির্মাণাধীন জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সংস্কারের কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে ক্ষুব্ধ বানভাসি স্থানীয়রা। খুলনার কয়রা, শ্যামনগর ও কালীগঞ্জের এক অংশ এবং আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে একমাত্র যোগাযোগর মাধ্যম হচ্ছে এই সড়ক। সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে দক্ষিণ অঞ্চলে দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, জরুরী ঔষধ পরিবহণ ও সুপেয় পানি পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা বাজার থেকে প্রতাপনগর ইউনিয়নের ঘোলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৩ কি.মি. সড়কের উপর দিয়ে নদীর জোয়ার-ভাটা চলতে থাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সড়কটি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল সুপ্রভাত সাতক্ষীরার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আম্পানে আমার ইউনিয়নের হাজরাখালী ও প্রতাপনগরের কোলা-হিজলিয়া গ্রামের বাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানি সবেগে এ সড়কটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ৭টি স্থানে ভেঙে সেখান দিয়ে প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা চলছে। আমার ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের কলিমাখালী গ্রামের মাখন দর্জির বাড়ির সামনে উক্ত সড়কের প্রায় ২শ’ হাত, ওয়জুদ্দীন সরদারের বাড়ির সামনে ৫০ হাত, ধনঞ্জয় মÐলের বাড়ি সংলগ্ন ২০ হাত, দীনবন্ধু স্বর্ণকারের বাড়ি সংলগ্ন ২৫ হাত, কালিপদ মÐলের বাড়ি সংলগ্ন ২৫ হাত ও ঘোলা গ্রামের আলিমের দোকান সংলগ্ন প্রায় ২৫ হাত রাস্তা ভেঙে সেখান দিয়ে জোয়ার-ভাটা চলছে। সড়ক বিভাগ কোন উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয় জনগণ স্ব-উদ্যোগে মাখন দর্জি, ওয়জুদ্দীন ও ধনঞ্জয়ের বাড়ির সামনে প্রায় ২শ’ ৭০ হাত বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে তার উপর দিয়ে চলাচল করছে’। এছাড়া পানির ¯্রােতে একই ওয়ার্ডের কলিমাখালি গ্রামের ৪ টি স্থানে এলজিইডির রাস্তা ভেঙে গেছে। গ্রামে ঢুকতে আব্দুস সবুর সরদারের বাড়ি সংলগ্ন প্রায় ৩৫ হাত, আব্দুস ছাত্তার সরদারের বাড়ি সংলগ্ন ৪০ হাত, সিরাজুল গাজীর বাড়ির সামনে ২৫ হাত ও কলিমাখালী গেটের সামনে আকিমুদ্দীনের বাড়ির সামনে এলজিইডির প্রায় ৩শ’ হাত রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সেখানে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করছে বানভাসি জনগণ। না সড়ক ও জনপদ বিভাগ না এলজিইডি কোন পক্ষই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব সড়ক সংস্কার করতে এগিয়ে আসেনি। এই দুর্দিনে প্লাবিত লোকজন বাধ্য হয়ে তাই নিজস্ব অর্থায়নে এসব সাঁকো গুলো নির্মাণ করে চলাচল করছে’। তিনি আরও জানান, ‘সওজ কর্মকর্তাদের সাথে বললে তারা বলেন পানি কমা শুরু করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এদিকে দু’মাস হতে চললেও হাজরাখালী বাঁধের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই সড়কের ভাঙা স্থান দিয়ে এভাবে জোয়ার-ভাটা চলতে থাকলে রাস্তাগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্লাবিত এলাকার দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, জরুরী ঔষধ পরিবহণ ও সুপেয় পানি পৌঁছাতে কি পরিমাণে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেটা না দেখলে বুঝতে পারবেন না। ছোট ছোট শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা,নারী, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কলিমাখালী গ্রামের ৬৫ পরিবার কলিমাখালী প্রাইমারি স্কুলে (২৩), নাসিমাবাদ সাইক্লোন সেল্টারে (২৭) ও মাদ্রাসায় (১৫) আশ্রয় নিয়ে করোনার মধ্যেও গাদাগাদি হয়ে বসবাস করছে। পানি বন্দী গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িই তাদের ভিটার উঁচু স্থানে বাঁশের মাঁচা করে নিয়ে তার মধ্যেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জোয়ারের সময় নৌকায় আর ভাটায় পায়ে হেঁটে চলা ছাড়া কোন উপায় নেই। এসব এলাকার মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে মাড়িয়ালা ও নাকতাড়া কালীবাড়ি বাজার পর্যন্ত আসতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি ত্রাণ কম-বেশি পৌঁছালেও চাহিদার তুলনায় সেগুলো নেহাতই অপ্রতুল’। স্থানীয় সাংবাদিক ডা. শাহজাহান হাবিব জানান, ‘ভেঙে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত এ দুর্গম সড়ক দিয়ে কত কষ্ট সহ্য করে কীভাবে মানুষ চলাচল করছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সুপেয় পানির জন্য মানুষের হাহাকার যেমন আছে অমূল্য এই পানি বহন করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া নিত্য সংগ্রামের মত। এছাড়া বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া প্রায় দু’মাস কেউ মিষ্টি পানিতে গোসল পর্যন্ত করতে পারেনি। অনতিবিলম্বে ভেঙে যাওয়া হাজরাখালি বাঁধটি নির্মাণ করে এলাকায় জোয়ার-ভাটা বন্ধ করতে না পারলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে’। শ্রীউলা ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া হাজরাখালি বাঁধটি নির্মাণ করে এলাকায় জোয়ার-ভাটা বন্ধ করতে অবিলম্বে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বানভাসি মানুষ। 8,471,076 total views, 2,692 views today |
|
|
|